এসইও কি – SEO এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
এসইও (SEO), বর্তমান সময়ে যে কোনো ব্যবসার অনলাইন প্রচার ও প্রসার করার একটি জনপ্রিয় ও গ্রহনযোগ্য মাধ্যম। এখন ছোট থেকে বড় সকল প্রকার ব্যবসার জন্য অনলাইন উপস্থিতি বা ব্র্যান্ডিং অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর এই অনলাইন উপস্থিতি নিশ্চিত করার অন্যতম কৌশল এর নামই হচ্ছে এসইও।
আমি মো ফারুক খান, দীর্ঘ ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে এসইও নিয়ে কাজ করছি এবং প্রশিক্ষণও দিচ্ছি। আজ আমি আপনাদের সাথে এসইও কি এবং এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবো।
আমি চেষ্টা করবো এসইও এই ছোট্ট শব্দটির সঠিক অর্থ এবং সংজ্ঞা বুঝানোর জন্য। শুধু তাই না, এসইও এর শুরুটা কিভাবে হয়েছে, সে বিষয়েও কিছুটা কথা বলবো, চলুন তাহলে শুরু করি।
SEO-এর মূল উপাদানসমূহ (The Key Elements of SEO)

SEO মূলত তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়:
- অন-পেজ এসইও (On-page SEO)
- অফ-পেজ এসইও (Off-page SEO)
- টেকনিক্যাল এসইও (Technical SEO)
অন-পেজ এসইও (On-Page SEO) কী?
অন-পেজ এসইও হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনি আপনার ওয়েবসাইট বা কনটেন্টের ভেতরের (on the page) উপাদানগুলো গুগলের জন্য অপটিমাইজ করেন। এর মূল লক্ষ্য হলো সার্চ ইঞ্জিন ও ইউজার—দুজনকেই পরিষ্কার করে বোঝানো, আপনার কনটেন্ট আসলে কী বিষয়ে।
অন-পেজ এসইও-এর মূল উদ্দেশ্য:
- আপনার কনটেন্ট টার্গেট কীওয়ার্ড অনুযায়ী সাজানো।
- ইউজার যেন সহজে তথ্য পায় এবং ওয়েবসাইটে সময় কাটায়।
- গুগল যেন আপনার পেজটি স্ক্যান ও ইনডেক্স করতে পারে সহজে।
অন-পেজ এসইও-এর ভেতরের গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো:
- কিওয়ার্ড রিসার্চ (Keyword Research)
- টাইটেল ট্যাগ অপটিমাইজেশন (Title Tag Optimization)
- মেটা ডিসক্রিপশন (Meta Description)
- হেডিং ট্যাগ (Heading Tags: H1, H2, H3…)
- ইউআরএল স্ট্রাকচার (URL Structure)
- কনটেন্ট অপটিমাইজেশন (Content Optimization)
- ইমেজ অপটিমাইজেশন (Image Optimization)
- ইন্টারনাল লিঙ্কিং (Internal Linking)
- মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন
- ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ও রিডেবিলিটি
এখন প্রতিটি বিষয় নিচে বিস্তারিত আলোচনা করছি।
১. কিওয়ার্ড রিসার্চ (Keyword Research)

কিওয়ার্ড রিসার্চ হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনি খুঁজে বের করেন, ইউজাররা কোন শব্দ বা প্রশ্ন গুগলে সার্চ করছে।
🔹 কেন দরকার?
- আপনি যদি ভুল কিওয়ার্ড টার্গেট করেন, তাহলে আপনার কনটেন্ট কেউ খুঁজেই পাবে না।
- সঠিক কিওয়ার্ড মানে সঠিক ট্র্যাফিক, যারা সত্যিই আপনার পণ্য/সার্ভিসে আগ্রহী।
🔹 কিভাবে করবেন?
Step 1: আইডিয়া বের করুন
- Google Search এর Autocomplete ব্যবহার করুন
- People Also Ask দেখুন
- আপনার কম্পিটিটরের ওয়েবসাইট ঘেটে দেখুন তারা কোন কিওয়ার্ডে র্যাঙ্ক করছে
Step 2: টুলস ব্যবহার করুন
- Ubersuggest (ফ্রি ও জনপ্রিয়)
- Google Keyword Planner (ফ্রি, গুগলের অফিশিয়াল টুল)
- AnswerThePublic – প্রশ্নভিত্তিক কিওয়ার্ড খুঁজতে পারফেক্ট
Step 3: পর্যালোচনা করুন
- Monthly search volume
- Competition (কতজন মানুষ এই কিওয়ার্ডে র্যাঙ্ক করতে চাইছে)
- Intent (লোকটা কী করতে চাইছে? কিনতে? জানতে? খুঁজতে?)
উদাহরণ:
Keyword: “এসইও ট্রেনিং বাংলাদেশ”
- Volume: ২,৪০০
- Intent: মানুষ ট্রেনিং করতে চায়
- আপনি যদি এসইও কোর্স চালান, এটা আপনার জন্য পারফেক্ট কিওয়ার্ড
২. টাইটেল ট্যাগ অপটিমাইজেশন (Title Tag Optimization)

টাইটেল ট্যাগ হলো আপনার ওয়েব পেজের শিরোনাম, যা গুগলের সার্চ রেজাল্টে (SERP) দেখা যায়।
🔹 কেন দরকার?
- গুগল টাইটেল পড়ে বোঝে, আপনার কনটেন্ট কোন বিষয়ে।
- ব্যবহারকারীরা টাইটেল দেখে সিদ্ধান্ত নেয় ক্লিক করবে কি না।
🔹 কিভাবে অপটিমাইজ করবেন?
- ফোকাস কিওয়ার্ড টাইটেলের শুরুর দিকে দিন
- দৈর্ঘ্য ৫০–৬০ ক্যারেক্টারের মধ্যে রাখুন
- টাইটেল আকর্ষণীয় ও ক্লিক-বান্ধব বানান
- ইমো বা সংখ্যা ব্যবহার করতে পারেন:
উদাহরণ: ✅ “২০২৫ সালে সেরা এসইও টিপস (বাংলা গাইড)”
৩. মেটা ডিসক্রিপশন (Meta Description)

মেটা ডিসক্রিপশন হলো আপনার পেজের সংক্ষিপ্ত সারাংশ, যা SERP-তে টাইটেলের নিচে দেখা যায়।
🔹 কেন দরকার?
- ভালো মেটা ডিসক্রিপশন ইউজারকে ক্লিক করতে উৎসাহ দেয়
- গুগল যদি কনটেন্টে রিলেভেন্ট ডিসক্রিপশন না পায়, তখন সে নিজের মতো করে তুলে ধরে
🔹 কিভাবে লিখবেন?
- দৈর্ঘ্য ১৫০–১৬০ ক্যারেক্টারের মধ্যে রাখুন
- টার্গেট কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন
- ক্লিয়ার CTA (Call to Action) দিন যেমন:
“এখনই পড়ুন”, “ফ্রি গাইড ডাউনলোড করুন”, “শিখে নিন”
৪. হেডিং ট্যাগ (Heading Tags)

H1, H2, H3 ইত্যাদি HTML হেডিং ট্যাগ—যা কনটেন্টকে গঠন করে। এটি শুধু ডিজাইন না, SEO-র দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
🔹 কেন দরকার?
- গুগল বুঝতে পারে কোন অংশটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ (H1), কোনটা সাব-টপিক (H2)
- ইউজারও সহজে স্ক্যান করে পড়তে পারে
🔹 কিভাবে অপটিমাইজ করবেন?
- H1-এ অবশ্যই প্রাইমারি কিওয়ার্ড দিন (শুধু একবার ব্যবহার করুন)
- H2-তে সাবটপিক ও রিলেটেড কিওয়ার্ড ব্যবহার করুন
- H3-তে পয়েন্ট, টিপস বা এক্সট্রা ইনফো দিন
৫. ইউআরএল স্ট্রাকচার (URL Structure)

আপনার ওয়েব পেজের ঠিকানা বা লিংককে ইউআরএল বলা হয়। যেমন:
www.example.com/what-is-seo
🔹 কেন দরকার?
- একটি ক্লিন ও অর্থবোধক ইউআরএল গুগল ও ইউজার—দুজনের কাছেই বোধগম্য হয়।
- কিওয়ার্ড থাকলে র্যাঙ্কিং বাড়ে এবং CTR (Click-Through Rate) উন্নত হয়।
🔹 কিভাবে অপটিমাইজ করবেন?
- ইউআরএলে কীওয়ার্ড দিন: /seo-tips
- ছোট ও সহজ রাখুন (৪-৫ শব্দের মধ্যে)
- স্টপওয়ার্ড (যেমন: and, for, the) এড়িয়ে চলুন
- স্পেসের বদলে hyphen (-) ব্যবহার করুন
- বাংলা ইউআরএল ব্যবহার না করাই ভালো (কখনও ইউজার কপি করলে গারবেজ দেখায়)
✅ উদাহরণ (ভালো): /seo-tips-bangladesh
❌ উদাহরণ (খারাপ): /what-is-the-best-way-to-do-seo-in-bangladesh
৬. কনটেন্ট অপটিমাইজেশন (Content Optimization)

আপনার ওয়েবসাইটের ভেতরের লেখা, তথ্য, গাইড ইত্যাদি গুগল ও ইউজারের জন্য উপযোগী করে সাজানো।
🔹 কেন দরকার?
- গুগল এখন “Helpful Content Update” চালু করেছে (2022–2024)
- শুধু কীওয়ার্ড থাকলেই হবে না, উপকারী, নির্ভরযোগ্য ও মানুষের জন্য লেখা কনটেন্ট চাই
🔹 কিভাবে করবেন?
✅ কিওয়ার্ড স্টাফিং এড়িয়ে চলুন
– ১০ বার না লিখে ২–৩ বার সঠিকভাবে ব্যবহার করুন
✅ Synonyms ও Related Terms (LSI) ব্যবহার করুন
✅ প্রতিটি প্যারাগ্রাফে এক আইডিয়া দিন, বড় প্যারা এড়িয়ে চলুন
✅ উত্তরমূলক প্রশ্ন যোগ করুন – যেমন:
– “এসইও কিভাবে কাজ করে?”
– “গুগল কনটেন্ট কীভাবে র্যাঙ্ক করে?”
✅ মানুষের সমস্যার সমাধান দিন – এটা গুগলের মূল ফোকাস
✅ আপডেটেড তথ্য, সোর্স ও পরিসংখ্যান ব্যবহার করুন
– উদাহরণ: “৭৩% ইউজার গুগলে সার্চ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়”
🔗 Source: Statista, 2023
৭. ইমেজ অপটিমাইজেশন (Image Optimization)

ওয়েবসাইটে থাকা ছবিগুলো সার্চ ইঞ্জিন ও ইউজারের জন্য অপটিমাইজ করা।
🔹 কেন দরকার?
- গুগল ইমেজ “দেখে না”, Alt Text পড়ে বুঝে
- সঠিক অপটিমাইজেশন পেজ স্পিডও বাড়ায়
- গুগল ইমেজ সার্চ থেকেও ভিজিটর আসে
🔹 কিভাবে করবেন?
- ফাইল নাম অর্থবোধক রাখুন: seo-tips-bd.jpg
- Alt Text-এ কীওয়ার্ড যুক্ত করুন: alt=”বাংলাদেশের সেরা এসইও টিপস”
- ফাইল সাইজ কমিয়ে দিন (WebP ফরম্যাট ভালো)
- Responsive Image Tag ব্যবহার করুন
৮. ইন্টারনাল লিঙ্কিং (Internal Linking)

একটি পেজ থেকে নিজের ওয়েবসাইটের অন্য পেজে লিঙ্ক দেওয়া।
🔹 কেন দরকার?
- গুগল বুঝতে পারে কোন পেজগুলো গুরুত্বপূর্ণ
- ইউজার আরও পেজে ভিজিট করে → Bounce Rate কমে
- SEO authority এক পেজ থেকে আরেক পেজে ট্রান্সফার হয়
🔹 কিভাবে করবেন?
- রিলেটেড টপিকে লিঙ্ক দিন:
“আরো জানুন ➝ এসইও এর ধরণ” - Anchor Text অর্থবোধক হোক (যেমন: “এসইও কোর্স”, “গুগল র্যাঙ্কিং”)
৯. মোবাইল ফ্রেন্ডলি ডিজাইন

যে ডিজাইন মোবাইল ডিভাইসে সহজে দেখা যায় ও ব্যবহার করা যায়।
🔹 কেন দরকার?
- বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহারকারী প্রায় ৯০%
- Google “Mobile-First Indexing” ফলো করে
🔹 কিভাবে করবেন?
- রেস্পনসিভ টেমপ্লেট ব্যবহার করুন (যেমন: WordPress এ Astra, Hello Elementor)
- গুগলে চেক করুন: Mobile Friendly Test Tool
- ছোট ফন্ট, ক্লিয়ার বোতাম, ফাস্ট লোডিং
কেন অফ-পেজ এসইও দরকার?
- গুগল শুধু আপনার কনটেন্ট দেখে নয়, বাইরের লোকজন আপনার ওয়েবসাইট সম্পর্কে কী বলছে সেটাও দেখে।
- আপনার সাইটে যত বেশি কোয়ালিটি ব্যাকলিঙ্ক, শেয়ার, ব্র্যান্ড মেনশন থাকবে — র্যাঙ্ক তত ভালো হবে।
🔎 Google বলছে:
“Links continue to be one of the most important ranking factors.”
🔗 Source: Google Search Central Blog.

অফ-পেজ এসইও-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো:
- ব্যাকলিঙ্ক বিল্ডিং (Backlink Building)
- সোশ্যাল সিগনাল (Social Signals)
- ব্র্যান্ড মেনশন (Brand Mentions)
- গেস্ট পোস্টিং (Guest Posting)
- ফোরাম ও Q&A মার্কেটিং
- লোকাল SEO এবং Google My Business
- রিভিউ ও ফিডব্যাক
- ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
১. ব্যাকলিঙ্ক বিল্ডিং (Backlink Building)
যখন অন্য ওয়েবসাইট আপনার ওয়েবসাইটের লিংক দেয়, তাকে বলে ব্যাকলিঙ্ক।
🔹 কেন দরকার?
- ব্যাকলিঙ্ক হলো অন্যদের কাছ থেকে আপনার সাইটের প্রতি ভোট (Vote of Trust)
- এটা গুগলকে বলে আপনি অথরিটি ওয়েবসাইট
- High DA (Domain Authority) সাইট থেকে লিঙ্ক পেলে র্যাঙ্ক দ্রুত বাড়ে
🔹 কিভাবে করবেন?
✅ গেস্ট পোস্টিং করুন
– নিজে লিখে অথরিটি ব্লগে পোস্ট দিন ও লিঙ্ক নিন
✅ ব্রোকেন লিঙ্ক কৌশল ব্যবহার করুন
– অন্যের সাইটে থাকা ডেড লিঙ্ক ঠিক করে নিজের লিঙ্ক দিন
✅ রিলেটেড ব্লগ বা নিউজ সাইটে ফিচার পেতে চেষ্টা করুন
– যেমন: techjournalbd.com, trickbd.com
✅ Local Backlink Opportunity খুঁজুন
– bdjobs.com, local directories, forum like bdonlineforum.com
২. সোশ্যাল সিগনাল (Social Signals)
ফেসবুক, লিংকডইন, টুইটার ইত্যাদিতে শেয়ার, লাইক, কমেন্ট ইত্যাদি সোশ্যাল ইঙ্গিত (signal) দেয় যে কনটেন্টটি জনপ্রিয়।
🔹 কেন দরকার?
- সরাসরি র্যাঙ্ক ফ্যাক্টর না হলেও Google এটা দেখে
- ট্রাস্ট ও ট্রাফিক দুইই বাড়ে
🔹 কিভাবে করবেন?
- কনটেন্ট শেয়ারযোগ্য বানান (visual + headline)
- সোশ্যাল CTA দিন: “পোস্টটি শেয়ার করতে ভুলবেন না”
- ফেসবুক গ্রুপে বা ইউজার কমিউনিটিতে পোস্ট করুন
৩. ব্র্যান্ড মেনশন (Brand Mentions)
যখন আপনার ওয়েবসাইট, কোম্পানি বা নাম কোন ব্লগ/ওয়েবসাইটে উল্লেখ (mention) পায়, এমনকি লিঙ্ক না থাকলেও।
🔹 কেন দরকার?
- গুগল এখন Unlinked Brand Mentions ও ট্র্যাক করে
- ব্র্যান্ড অথরিটি বাড়ে
🔹 কিভাবে পাবেন?
- ইন্ডাস্ট্রি ব্লগে নিজের নাম/কোম্পানির গল্প শেয়ার করুন
- ফোরাম বা নিউজ সাইটে কমেন্ট করুন
- Press release দিন (উদাহরণ: banglamail24, jagonews)
৪. গেস্ট পোস্টিং (Guest Posting)
আপনি অন্য ওয়েবসাইটে একটি কনটেন্ট লিখে দেন এবং সেখানে নিজের সাইটের লিঙ্ক দেন।
🔹 কেন দরকার?
- অথরিটি বিল্ড হয়
- নতুন অডিয়েন্স পায়
- ব্যাকলিঙ্ক পাওয়া যায়
🔹 কোথায় করবেন?
- Tech, SEO, Marketing, Lifestyle ব্লগ
- Example: trickbd.com, deshitech.com
- International: medium.com, shoutmeloud.com
৫. ফোরাম ও Q&A মার্কেটিং
প্রশ্নোত্তর সাইট বা ফোরামে লোকজনের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে নিজের সাইটের লিঙ্ক শেয়ার করা।
🔹 কেন দরকার?
- টার্গেটেড ট্র্যাফিক আসে
- Google Q&A কনটেন্টকে প্রাধান্য দেয়
🔹 কোথায় করবেন?
- Quora, Reddit, Stack Exchange
- বাংলা ফোরাম: BDIX Forum, Techtunes
উদাহরণ:
কেউ জিজ্ঞেস করেছে “এসইও শিখবো কোথায়?”, আপনি উত্তর দিতে পারেন:
“আমি Md Faruk Khan স্যারের ব্লগ পড়ে শিখেছি, খুবই হেল্পফুল।”
৬. লোকাল এসইও ও Google Business Profile
আপনার ব্যবসা বা সার্ভিসকে লোকাল সার্চ রেজাল্টে র্যাঙ্ক করানো।
🔹 কেন দরকার?
- “near me” সার্চ বাংলাদেশেও দিনে দিনে বাড়ছে
- Google Maps-এ দেখা যায়
🔹 কিভাবে করবেন?
- Google Business Profile খুলুন
- ঠিকানা, ছবি, সার্ভিস টাইপ, সময়, ফোন নম্বর দিন
- কাস্টমারদের রিভিউ দিতে বলুন
৮. ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং
লোকাল বা ন্যানো ইনফ্লুয়েন্সারদের মাধ্যমে নিজের কনটেন্ট/সাইট প্রমোট করানো।
🔹 কেন দরকার?
- দ্রুত ট্রাস্ট এবং রিচ পাওয়া যায়
- ব্যাকলিঙ্ক, সোশ্যাল শেয়ার, ব্র্যান্ড রিকগনিশন বাড়ে
🔹 কিভাবে করবেন?
- নিজ ইন্ডাস্ট্রির ফেসবুক পেজ, ইউটিউবার, ব্লগার খুঁজে নিন
- কোলাবরেশন বা পেইড প্রমোশনের অফার দিন
টেকনিক্যাল এসইও (Technical SEO) কী?

টেকনিক্যাল এসইও হলো এমন সব টেকনিক্যাল কাজ, যা গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনকে সাহায্য করে আপনার ওয়েবসাইট সঠিকভাবে ক্রল (crawl) ও ইনডেক্স (index) করতে।
এছাড়া, এটি ওয়েবসাইটের পারফরম্যান্স, নিরাপত্তা ও মোবাইল অভিজ্ঞতা উন্নত করার জন্যও খুব জরুরি।
কেন টেকনিক্যাল এসইও দরকার?
- গুগল আপনার ওয়েবসাইট বুঝতে না পারলে র্যাঙ্ক দিবে না
- ওয়েবসাইট যদি ধীর, অব্যবस्थित বা মোবাইল-অপ্টিমাইজড না হয় → ইউজার সাইট ছেড়ে চলে যাবে → Google ধরে নিবে কনটেন্ট বাজে
🔎 Google Core Update-এর পর থেকে টেকনিক্যাল SEO আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
🔗 Source: Google Search Central Blog
টেকনিক্যাল এসইও-এর গুরুত্বপূর্ণ উপাদানগুলো:
- ওয়েবসাইট স্পিড (Page Speed Optimization)
- মোবাইল ফ্রেন্ডলিনেস (Mobile Friendliness)
- সাইট স্ট্রাকচার ও নেভিগেশন
- SSL এবং HTTPS
- XML সাইটম্যাপ ও Robots.txt
- কোর ওয়েব ভাইটালস (Core Web Vitals)
- ক্রল এরর ও ইনডেক্সিং ইস্যু
- Canonical URL
- Structured Data / Schema Markup
- ডুপ্লিকেট কনটেন্ট অপটিমাইজেশন
১. ওয়েবসাইট স্পিড (Page Speed Optimization)
ওয়েবসাইট লোড হতে কত সময় নিচ্ছে। যদি পেজ লোড হতে বেশি সময় লাগে, তাহলে ইউজার চলে যাবে এবং Google সাইটকে নিচে নামাবে।
কেন দরকার:
- ফাস্ট লোডিং = ভালো ইউজার অভিজ্ঞতা
- বাউন্স রেট কমে যায়
- Google Core Web Vitals-এ স্পিড একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ
কিভাবে চেক করবেন:
👉 PageSpeed Insights টুল ব্যবহার করে স্কোর দেখে নিন
👉 ফাইল অপ্টিমাইজ করুন, WebP ইমেজ ব্যবহার করুন, এবং CDN যুক্ত করুন
২. মোবাইল ফ্রেন্ডলিনেস (Mobile Friendliness)
ওয়েবসাইট মোবাইলে ঠিকমতো দেখা ও ব্যবহারের উপযোগী কিনা। এখন প্রায় ৮০% ইউজার মোবাইল থেকেই ভিজিট করে।
কেন দরকার:
- Google এখন “Mobile-First Indexing” ফলো করে
- মোবাইল ইউজারদের জন্য সহজ না হলে র্যাঙ্ক কমে
কিভাবে চেক করবেন:
👉 Mobile-Friendly Test দিয়ে সাইট টেস্ট করুন
👉 রেসপনসিভ ডিজাইন ও রিডেবল ফন্ট ব্যবহার করুন
৩. সাইট স্ট্রাকচার ও নেভিগেশন
সাইটে কনটেন্ট, পেজ এবং মেনুগুলোর গঠন কেমন, এবং তা কত সহজে ব্যবহার করা যায়।
কেন দরকার:
- গুগল সহজে ক্রল ও ইনডেক্স করতে পারে
- ইউজার পছন্দ করে গুছানো ওয়েবসাইট
কিভাবে ঠিক করবেন:
- স্পষ্ট মেনু, Breadcrumb, Category-পেজ যুক্ত করুন
- Home → Blog → Article এইভাবে লিংকিং স্ট্রাকচার বানান
৪. SSL এবং HTTPS
ওয়েবসাইটে নিরাপদ সংযোগ (HTTPS) আছে কিনা। HTTP এখন পুরনো, Google নিরাপত্তা চায়।
কেন দরকার:
- HTTPS না থাকলে Google সাইটকে নিরাপদ নয় বলে চিহ্নিত করে
- ব্যবহারকারীর তথ্য সুরক্ষিত থাকে
কিভাবে চেক করবেন:
👉 URL এ দেখুন: https:// আছে কি না
👉 SSL ইনস্টল করতে পারেন: Let’s Encrypt (ফ্রি) বা Cloudflare
৫. XML সাইটম্যাপ ও Robots.txt
- XML সাইটম্যাপ: কোন পেজগুলো গুগলে ইনডেক্স হবে সেটা জানানোর ম্যাপ
- robots.txt: কোন পেজ গুগল দেখবে, আর কোনটা দেখবে না তা নিয়ন্ত্রণ করে
কেন দরকার:
- গুগল যেন আপনার সাইট বুঝে ও ঠিকঠাক ইনডেক্স করে
কিভাবে তৈরি ও চেক করবেন:
👉 Yoast SEO বা RankMath প্লাগইন ব্যবহার করে সহজে সাইটম্যাপ ও robots.txt বানানো যায়
👉 চেক করুন: yourdomain.com/sitemap.xml এবং yourdomain.com/robots.txt
৬. কোর ওয়েব ভাইটালস (Core Web Vitals)
Google-এর ইউজার এক্সপেরিয়েন্স ভিত্তিক ৩টি মেট্রিক
- LCP: বড় এলিমেন্ট কত সময়ে লোড হচ্ছে
- FID: প্রথম ক্লিক কত দেরিতে কাজ করে
- CLS: স্ক্রিনে জাম্প বা পরিবর্তন
কেন দরকার:
- Google Page Experience Update-এ এগুলো সরাসরি র্যাংকিং ফ্যাক্টর
কিভাবে চেক করবেন:
👉 Google Search Console
👉 PageSpeed Insights
৭. ক্রল এরর ও ইনডেক্সিং ইস্যু
গুগল আপনার কিছু পেজ পড়তে বা ইনডেক্স করতে পারছে না — যেমন 404, redirect loop, বা blocked pages।
কেন দরকার:
- ইনডেক্স না হলে কনটেন্ট সার্চে আসবে না
- অনেক ক্রল ইরর র্যাংকিং এ প্রভাব ফেলে
কিভাবে চেক করবেন:
👉 Google Search Console > Coverage রিপোর্ট দেখুন
👉 Broken Link Checker ব্যবহার করুন
৮. Canonical URL
একই কনটেন্ট যদি একাধিক URL-এ থাকে, তাহলে Google কে বলে দিতে হবে কোনটা মূল (canonical) পেজ।
কেন দরকার:
- ডুপ্লিকেট কনটেন্ট সমস্যা থেকে বাঁচতে
- SEO ভ্যালু বিভাজন না হয়ে একজায়গায় থাকে
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
👉 HTML হেড সেকশনে <link rel=”canonical” href=”https://yourdomain.com/page/”> দিন
👉 Yoast বা RankMath অটো Canonical সেট করে
৯. Structured Data / Schema Markup
গুগলকে বাড়তি তথ্য দেওয়ার একটা পদ্ধতি — যেমন প্রোডাক্ট রেটিং, FAQ, রিভিউ ইত্যাদি।
কেন দরকার:
- Rich Snippet পাওয়া যায়
- ক্লিক বাড়ে (CTR ↑)
কিভাবে করবেন:
👉 Schema Generator টুল ব্যবহার করুন
👉 WordPress-এ RankMath বা Schema Pro প্লাগইন ব্যবহার করুন
👉 চেক করুন: Rich Results Test Tool
১০. ডুপ্লিকেট কনটেন্ট অপটিমাইজেশন
একই কনটেন্ট একাধিক URL বা পেজে থাকা।
কেন দরকার:
- গুগল বিভ্রান্ত হয় কোন পেজ র্যাঙ্ক করবে
- র্যাঙ্কিং নষ্ট হয়
কিভাবে সমাধান করবেন:
👉 Canonical tag ব্যবহার করুন
👉 অপ্রয়োজনীয় পেজ নো-ইনডেক্স করুন
👉 এক কনটেন্টকে এক পেজেই সীমাবদ্ধ রাখুন
এসইও এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
এসইও এর জন্ম নিয়ে কথা বলতে হলে আমাদের আগে জানতে হবে সার্চ ইঞ্জিন এর ইতিহাস। কেননা, সার্চ ইঞ্জিন না তৈরি হলে সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশনও প্রয়োজন হতো না।
৯০ এর দশককে সার্চ ইঞ্জিনের জন্ম কাল ধরা হয়। কারণ, এই সময়ের মধ্যেই অনেক সার্চ ইঞ্জিন এর জন্ম, যার মধ্যে গুগল অন্যতম।
আর্চিকে (মূল নাম “আর্কাইভস”) প্রথম সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা ১৯৯০ সালে কানাডার মন্ট্রিলের ম্যাকগিল ইউনিভার্সিটির ছাত্র অ্যালান এমটাজ তৈরি করেছিলেন।
কিন্তু, WebCrawler ছিল প্রথম ওয়েব সার্চ ইঞ্জিন, যা সম্পূর্ণ টেক্সট সার্চ প্রদান করে। ১৯৯৪ সালে, ব্রায়ান পিঙ্কারটন, ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানের ছাত্র, ওয়েবক্রলার তৈরি করেছিলেন, যা ব্যবহারকারীদের একটি ওয়েবপেজ থেকে যেকোনো শব্দ সার্চ করতে সহায়তা করতো।
“SEO” (সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান) শব্দটি প্রথম ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি ব্যবহার শুরু হয়, যদিও সঠিক তারিখটি অনিশ্চিত। যখন ইন্টারনেটের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে এবং AltaVista, WebCrawler এবং পরবর্তীতে Google এর মতো সার্চ ইঞ্জিনগুলি আরও জনপ্রিয় হওয়ার সাথে সাথে ওয়েবসাইটের মালিকরাও তাদের ওয়েবসাইট গুলিকে সার্চ রেজাল্ট পেজে ভাল র্যাঙ্ক করার গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন।
এসইও এনালিস্ট ড্যানি সুলিভানের মতে, “সার্চ ইঞ্জিন অপ্টিমাইজেশান” শব্দটি সম্ভবত ১৯৯৭ সালে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি আরো বলেন, ব্রুস ক্লে এই এসইও শব্দটিকে জনপ্রিয় করার প্রথম সারির ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম।
এরপর ১৯৯৮ সালে গুগল সার্চ ইঞ্জিনের যাত্রা শুরু হলে, এসইও এই শব্দটির জনপ্রিয়তাও বাড়তে থাকে এবং ১২ই ডিসেম্বর, ২০০৩ সালে, এসইও পেজটি প্রথমবারের মতো উইকিপিডিয়ায় স্থান পায়।
শেষ কথা
আমি আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে এতদিনে বুঝতে পড়েছি যে, এসইও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বা স্কীল। যা অনলাইন জগতে থাকা প্রতিটি ওয়েবসাইট (বিশেষ করে লোকাল সার্ভিস ও ইকমার্স) এর জন্য অপরিহার্য।
তাই আপনি যদি একটি ওয়েবসাইট এর মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আপনার অবশ্যই এসইও জ্ঞান থাকা উচিত। আমি আপনাকে এসইও তে মাস্টার হতে বলছি না, এটা আপনার কাজও না কিন্তু আপনার ব্যবসা বা ব্যক্তিগত প্রচার ও প্রসারের জন্য আপনার এর গুরুত্বটা বোঝা দরকার। আর এর জন্য আপনার এসইও এর বেসিক জ্ঞান থাকাটা জরুরি। আমি চেষ্টা করবো আমার এই ব্লগের মাধ্যমে আপনাদের এসইও সম্পর্কে যতটুকু সম্ভব সাধারণ জ্ঞানটুকু দেয়ার জন্য। আজ তার প্রথম চেষ্টা, এসইও কি? এর টপিক দিয়ে শুরু করলাম।
লেখাটি যদি আপনার ভালো লেগে থাকে তাহলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। আর আপনার যদি এই সংক্রান্ত কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্টে জানালে আমি চেষ্টা করবো সঠিক উত্তরটি দেয়ার।
সবাই ভালো থাকবেন, খুব শীঘ্রই ফিরে আসছি অন্য কোনো নতুন টপিক নিয়ে, ইনশাআল্লাহ।
SEO (Search Engine Optimization) is absolutely essential for any digital marketing strategy. I now have a much clearer understanding of what SEO is thanks to this blog post.
Thank you